চীনাদের উপর জাপানি সেনাদের যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল

১৯ শতকে  বহু দেশেই নির্মম চিত্র প্রকাশ এসেছিল। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল চীন জাপানের দ্বিতীয় যুদ্ধের সময় নানকিং গণহত্যা। সেই সময় কালে একাধিক মানুষকে হত্যা করার পাশাপাশি রীতিমত ধর্ষণ চালায় জাপানি সেনাবাহিনীরা।  যদিও সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জাপান সরকার।  সেই কারণে নানকিং ধর্ষণ তথা গনহত্যাকে কেন্দ্র করে আজও বিতর্ক রয়েছে চীন জাপানের মধ্যে। তবে ঠিক কি হয়েছিল নামকিন গণহত্যা।  

১৯৩৭ সালে ওসাকা মাইনিচি শিম্বুন  এবং তার বোন টোকিও নিচি  নিচি শিম্বুন দুই জাপানি অফিসার তোশিয়াকি মুকাই এবং সুসিওশি নোডার মাধ্যমে  একটি  প্রতিযোগিতার কথা তুলে ধরে যেখানে দু’জনকেই একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যায়।  সেখানেই রীতিমত গণহত্যা চিত্রর প্রেক্ষাপটের সূচনা  হয়। এই প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগে নানকিন যাওয়ার পথেই।  সেই সময়কাল ছিল ১৯৩৭ সালের ৩০শে নভেম্বর থেকে ১৩ই ডিসেম্বর।

পরবর্তীতে অবশ্য নানকিন হত্যাকান্ডের পর চারটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।  যাদের মধ্যে একটি দ্য রেপ অফ নানকিং  প্রবন্ধটিতে মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার তুলে ধরেন লেখিকা হলোকাস্ট হল আইরিশ চ্যাং। তিনি লেখিকা হওয়ার পাশাপাশি একজন চিনা আমেরিকান ইতিহাসবিদ এবং সাংবাদিক। যথারীতি প্রবন্ধ লেখার জন্যে তিনিই যথেষ্ট বিতর্কিত একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছে। 

যদিও এই ইতিহাসবিদের লেখা বই অনুযায়ী বলা হয়েছে ১৯৩০ সালের প্রথমার্ধে জাপান ও চীনের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।  যার কারণে মাঞ্চুরিয়ায়  জাপানের সামরিক বাহিনী  রেলপথে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।  যথারীতি এরপর থেকেই বেশ কিছু বছর মাঞ্চুরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে জাপানি আধিকারিকরা।  তবে এই হত্যা ঘটনা পরবর্তীতে মুকডেন  ঘটনা নামে পরিচিতি পায়।   যথারীতি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেইসময় চিনা জাতীয়তাবাদী সরকারকে কোণঠাসা করা হয়েছিল। ফলে সরকার নীল লিপ্ত থাকার আরো সংকটের মুখে পড়েছিল মাঞ্চুরিয়া।  

পরবর্তীতে জাপানের সামরিক বাহিনীর সন্ত্রাস ক্রমবর্ধমানভাবে চীনের জাতীয়তাবাদী সরকারের প্রধান ঘাঁটি নানকিং শহরের দরজার কড়া নাড়ে।  সেই সময় ছিল ১৯৩৭ সাল। একই সালের  ১৩ই  ডিসেম্বর দীর্ঘ ছয়  সপ্তাহব্যাপী নানা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তাদের ওপর গণহত্যা এবং ধর্ষণঃ চালানো হয়।  যার কারনে সেই সময় গণহত্যা ও ধর্ষণের নিরিখে জনসংখ্যার মৃত্যু  হয়েছিল  ৪০ হাজার থেকে ৩ লাখ। সেই টানা ছয় সপ্তাহ গোটা দেশে শুধুমাত্র রক্তের লীলাখেলা চলেছে। 

যদিও জাপানে সৈন্যদের পাশবিক অত্যাচার থেকে বাঁচতে শহরের বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিটির নিরাপদ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিলেন।  যথারীতি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী এবং মিশনারী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত বিদেশিদের একটি গ্রুপ দ্বারা নির্মিত এই নিরাপদ অঞ্চলটিতে  শেল্টার নিয়েছিল প্রায় ২ লাখ  শরণার্থীরা।  কিন্তু কোথা থেকে এদের খবরের  গন্ধ পেয়ে সেখানে পৌঁছে যায় জাপানি সৈন্য দল।  খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার জন ম্যাগি ও বিবিসি উল্লেখ করে বলেছিলেন জাপানি নেকড়েরা শরণার্থীদের শিবির থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এমন ভাবে হত্যা করেছে যেন মনে হচ্ছিল খরগোশ শিকার করা হচ্ছে।  সুতরাং ছয় সপ্তাহ ব্যাপী চলা গণহত্যা ও ধর্ষণের জেরে দেশের জনগণ অর্ধেক সংখ্যায় পৌঁছে গিয়েছিল। 

চীনাদের উপর জাপানিদের এমন নৃশংস আচরণের কারণে সেইসময় জাপান সরকারকে সনদে আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে প্রচার চালিয়ে ছিল সরকারি পক্ষের আধিকারিক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ।  কিন্তু তিনি সেটা করেননি।  যদিও জাপান সরকার বাইপোলার ডিজঅর্ডারে  আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছিলেন ২০০৪ সালে। যথারীতি সেই সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত জাপান ও চীনের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে এখনও দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.