প্যাঙ্গং লেক থেকে শুরু করে ডাল লেক। ভারতবর্ষের অজানা আকর্ষণীয় ১০ টি লেক
শান্ত নদী কিংবা বিশৃঙ্খল সমুদ্র ভরাভরি মানুষের মনকে আকর্ষণ এবং বিচলিত করে। তাই সমুদ্র দর্শনে শীতের সিজেনে ঘর ছাড়া হয় এবং প্রাকৃতিক প্রেমীরা। কিন্তু এবার বেশি কষ্ট করতে হবে না। কারণ এখন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অপ্রকাশিত কিন্তু আকর্ষণীয় লেক। যেমন –
১) পরাশর লেক – হিমাচল প্রদেশ অবস্থিত এই লেকটি। তবে হিমাচল প্রদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হল পরাশর লেক। লোকো ভাষ্য অনুযায়ী পরাশর মুনিকে কেন্দ্র করে এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। তবে একবছরের সিংহভাগ সময় বরফে জমাট বাঁধা থাকে। মান্ডী থেকে মাত্র ৪৯ কিলোমিটার গেলেই সবুজে ঘেরা সমাহারের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে পরাশর লেককে। যেহেতু বছরের প্রায় বেশিরভাগ দিন বরফাবৃত হয়ে থাকে তাই এরপর নিরাপদে ট্রেকিং করা যাবে। লেকটি এতটাই নিরাপদ যেখানে বাচ্চারাও ট্রাকিং করার উপভোগ করতে পারে।
২) প্যাঙ্গং লেক – লাদাখের লেহ শহর থেকে মাত্র ৫ ঘন্টা পাহাড়ি পথে চড়াই-উতরাই পার করলে দেখা যাবে প্যাঙ্গং লেক। এই লেকের জল লবণাক্ত হয়। কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষণকারী বিষয়টি হলো পাহাড় বেষ্টিত নীলরঙা লেকের প্রকৃতিক অপার সৌন্দর্য। এইচডি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় যথেষ্ট জনপ্রিয়।
৩) লেক পাচোলা – উদয়পুর সিটি প্যালেসের উপর প্রায় চার কিমি দীর্ঘ ও তিনটি কিমি প্রস্তাব পর্যন্ত বিস্তৃত এই লোকটির আয়তন। এছাড়াও এখানে অন্যতম দর্শনীয় স্থান রামেশ্বর ঘাট। যার কারণে লেকে সবসময় একটি নৌকা বজায় থাকে। তবে যদি সময়টা সূর্যাস্ত হয় কিংবা সূর্যোদয় তাহলে কোন কথাই নেই। শান্তশিষ্ট প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বছরের অধিকাংশ মানুষ ভিড় জমায়।
৪) চন্দ্রতাল লেক – লাহোর এবং স্পিতি কুঞ্জুম লা পাস থেকে মাত্র ৭ কিমি পথ অতিক্রান্ত করলেই ৪৩০০ পাহাড়ের উচ্চতায় অবস্থিত নীল রং এবং প্রশান্ত সবুজের সমাহারে ঘেরা লেক হচ্ছে চন্দ্রতাল লেক। তবে লেকে পেছনে কিছু গল্প রয়েছে। যেমন চন্দ্রতাল মানে চন্দ্রের ন্যায়। সেই ক্ষেত্রে লেকের আকৃতি অর্ধচন্দ্র হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে চন্দ্রতাল।
৫) লোকতাক লেক – উত্তর-পূর্ব ভারতের সবথেকে বড়লোক হচ্ছে লোকতাক লেক। এই স্থানের দর্শনীয় স্থান হচ্ছে ফ্লোরা এবং ফণা। এছাড়া এখানে রয়েছে ভাসমান ফুমডিস। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ফুমডিস হলো মাটির ও গাছপালা দিয়ে তৈরি নানান পুঞ্জিভূত অংশ যা পচনের বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পচনশীল জিনিসগুলো লেকের উপর দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করা যেখানে মানুষ বসবাস করে। আর এই অভিনব জিনিসটি পর্যটক আকর্ষণ করে লেকে ভিড় জমানোর জন্য।
৬) সোমগো লেক – পূর্ব হিমালয়ের গ্যাংটক থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে তুষারাবৃত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বেষ্টিত দেখা যায় সোমগো লেক। স্থানীয় ভাষায় লেকের নাম ছাঙ্গু লেক। এই লেকের চারিপাশে মনোরম জায়গায় এবং রংবেরঙের প্রার্থনা পতাকা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বছরের প্রত্যেকটা দিন লেগে জল বিরাজমান থাকে কারণ আশেপাশের হ্রদ গুলি থেকে বরফ গলা জল এসে এখানে জমা হয়। সুতরাং এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি নামা।
৭) ডাল লেক – কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবশ্য তৈলেট আদিম সৌন্দর্যের প্রতিফলন করে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে শীত এবং গ্রীষ্মের আমেজে এখানে বিভিন্ন রকমের মনোরম সৌন্দর্য দেখা যায়। শ্রীনগরের ১৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই রাজার যুগ থেকে বহু হাউসবোটে ভর্তি। অর্থাৎ কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে এক শান্ত পরিবেশের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে ডাল লেক।
৮) চেম্ব্রা লেক – ওয়ানাদে অবস্থিত এই লোকটির আকৃতি হার্ট শেপের হয়। যার কারণে প্রেমিক যুগলদের কাছে এই লেক স্বর্গের থেকে কিছু কম নয়। তবে চেম্ব্রা লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে অ্যাডভেঞ্চার এর জন্য পাহাড়ে ট্রেকিংও জনপ্রিয়।
৯) রূপকুন্ড লেক – উত্তরাখণ্ডের সবচেয়ে রহস্যময় লেক হচ্ছে রূপকুণ্ড লেখ। এই লেকে পৌঁছাতে গেলে ৫-৬ দিন টানা ট্রাকিং করে তারপরে পৌঁছাতে হয়। তবে লেকটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে একাধিক রহস্য। সেই কারণে এটি রহস্যময় বা মিস্ট্রি লেক নামেও পরিচিত। কারণ বলা হয় শীতের জন্য বরফাবৃত থাকে লেকটি। কিন্তু যেই লেকের বরফ গলে জলে পরিণত হয় তখনই দৃশ্যমান হয় মানুষের কঙ্কাল এবং হাড়। যদিও এর পেছনে বৈজ্ঞানিক এবং অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বহু তর্ক বিতর্ক হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কেউই।
১০) ভেম্বানাদ লেক – কেরালা তথা ভারতের সবচেয়ে লম্বা ও বৃহৎ লেক নামে পরিচিত ভেম্বানাদ লেক। কেরালার কুমারাকমে অবস্থিত এই লেকটি। এখানকার আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো লেকের জল বিশুদ্ধ এবং নোনা জলের মিশ্রণে তৈরি জানোনা জলের বের দিয়ে আলাদা করা হয়। পর্যটকদের জন্য হাউসবোটে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে একটা ব্যাপার হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ হওয়া সত্বেও এটির পরিচিতি কম থাকার কারণে এখানে সেই ভাবে কোন পর্যটকদের ভিড় জমে না। তাই যারা এই লেক সম্পর্কে পরিচিত তারা এখানে নিরিবিলি সময় কাটাতে পারেন।